Dinamkhobar

Post Top Ad

Wednesday, April 12, 2023

আদিবাসী হওয়ার জন্য কুড়মিদের বারে বারে ট্রাক চেঞ্জ কেন ?

 

কুড়মিদের বারে বারে ট্রাক চেঞ্জ কেন ?


কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী আজ কুড়মিদের ST হওয়ার জন্য গলা ফাটাচ্ছেন, কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে President of India order 1950 এ ST থেকে কুড়মি সম্প্রদায় সেদিন ছিটকে বেরিয়ে গেল? সেদিন তো কংগ্রেস সরকারই ছিল। এটা কী নিছক একটা দুর্ঘটনা নাকী এর পেছনে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য ছিল? 

যদি দুর্ঘটনাই হয়ে থাকে তাহলে তার পরবর্তী কুড়মিদের আন্দোলন ST তে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য সংঘটিত হলনা কেন? উল্টে সেই সময় কুড়মি ক্ষত্রিয় মহাসভার আন্দোলন জোরদার হয়েছিল কী উদ্দেশ্যে? বিহার ইউ পির কথা বলছি না, খুদ জঙ্গলমহলে, এই অভাগা লেখক তার Eye witness. 

উঁচু জাতের মোহ ভঙ্গের পর নজর পড়ল সংরক্ষণের উপর। শুধু সংরক্ষণ হলেই হবেনা, ভাগটা বেশি থাকতে হবে। ST - 6%, SC-15%,

OBC - 27%. কোন ভাগটা ভারী দাদা? সেটাই চাই। 

তখনও আদিবাসী হওয়ার বিষয় টা মনে ছিল না। মনে থাকবে কী করে, ওটার ভাগ যে সব থেকে কম! 

তারপর মনে হল এটাও ভুল রাস্তা। সঙ্গে সঙ্গে ট্রাক চেঞ্জ, আদিবাসী হতে হবে। খুঁজো সেন্সাস রিপোর্ট, গেজেট খুঁজো, ইতিহাস লেখো, শহীদ আমদানি করো, বামুন বর্জন করো, মূর্তি পূজা বন্ধ করো, হলুদ পাগড়ি বাঁধো, তীর ধনুক তৈরী করো, রাস্তার উপর করম নাচো, লোককে দেখাতে হবে। শুধু কী তাই.... 

শুধু কুড়মি সমাজ নয়, বলো, আদিবাসী কুড়মি সমাজ - জিৎকার । যেনতেন প্রকারে কুড়মি শহীদ যোগাড় করতেই হবে, ইতিহাস মজবুত করতে হবে, রঘুনাথ সিং কে রঘুনাথ মাহাত করে মূর্তি বসাও। নেতাদের আমন্ত্রণ করে সাক্ষী রাখো। 

তারপর...... কুড়মি ভোট ব্যাংক নিয়ে সরকারকে ব্ল্যাকমেল করো, রেল রোড অবরোধ করো, যাবে কোথায় সরকার? 


এবার আসি —

জঙ্গলমহলের ক্ষত্রিয় কেন ST হতে চাইছে? 

শুধুই কী তাদের পরিচয়ের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য, না কী সংরক্ষণ কোটায় দুর্বলদের সাথে প্রতিযোগিতায় ফায়দা লুটার জন্য? 


আমিতো বলব অবশ্যই দুর্বলদের সাথে প্রতিযোগিতায় ফায়দা লুটার জন্যই। লেখাপড়া বা বুদ্ধির দিক থেকে আদিবাসীদের তুলনায় কুড়মিরা বহুগুনে ভালো। সাধারণ বিচারে দেখুননা, 1990 সাল পর্যন্ত general দের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছে, 1990 সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত OBC দের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চাকরি করছে। তাদের কাছে ST candidates কোনো প্রতিপক্ষ হল নাকী ??? দুর্বলদের সাথে প্রতিযোগিতা ছাড়াও 2006 এর বনাধিকার আইন জঙ্গলমহলে লাগু হলে সেখানে ব্যপক ভাবে এই ক্ষত্রিয় সম্প্রদায় লাভবান হবে। তার সাথে Scheduled Tribe দের জমি কেনা বেচার দরজাও তাদের কাছে খুলে যাবে। এত lucrative matter গুলোকে কী হাত ছাড়া করা যায়?? 


যদি আদিবাসী (জঙ্গলমহলের আদি বাসিন্দা) হিসাবেই পরিচয় পেতে চাইছে, তাহলে Scheduled Tribe হওয়ার জন্য আন্দোলন করার দরকার ছিলনা, পরিচয় স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য বিকল্প অনেক কিছুই রাস্তা ছিল বলে আমার ধারণা। তাদের সমাজ সংস্কৃতি আচার অনুষ্ঠান আমূল পরিবর্তন করে আদিবাসীদের মত প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে নিশ্চই সেখানে কেউ হস্তক্ষেপ করত না। সেটা তাদের সমাজের আভ্যন্তরীণ মামলা। রেল টেকা করে সরকারকে চাপ দেওয়ার দরকার ছিল না। যেমন অতীতে দেখেছি এরা উঁচু জাত হওয়ার জন্য পৈতা ধারন করেছে, বামুন দিয়ে বেহা করেছে, মূর্তি পূজা করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কই, তার জন্য তো রেল টেকার প্রয়োজন হয় নি? সেখানে তো কেউ বিরোধ করেনি। হ্যাঁ, তাদের ভাষা ও ধর্মের স্বীকৃতির পাওয়ার জন্য আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু Scheduled Tribe হতে গেলে existing Scheduled Tribe তো বিরোধ করবেই ভাই, এখানে অধিকারের প্রশ্ন আছে। 


আসামে সাঁওতাল মুন্ডা ওঁরাও Scheduled Tribe নয়, তাবলে কি ওদের আদিবাসী বলব না? যেহেতু এদের বংশধর অন্যান্য একাধিক রাজ্যে Scheduled Tribe status পেয়েছে সুতরাং তাদের Scheduled Tribe হওয়ার আন্দোলন যথেষ্ট যুক্তি আছে। তবুও টি ট্রাইব পরিচয় নিয়ে OBC category তেই থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এই ক্ষত্রিয়রাও না হয় এই ভাবে আদিবাসী পরিচয় নিয়ে OBC তে থাকতে পারত। কিন্তু উদ্দেশ্য তো শুধু আদিবাসী স্বীকৃতি আদায় নয়, উদ্দেশ্য তো অন্য জায়গায়। 


দেখুন, কোনো একটা সম্প্রদায় Scheduled Tribes হতে গেলে তার একটা নির্দিষ্ট মানদন্ড আছে। সেই মানদন্ড পূরণ করতে পারছে কী না তা ঠিক করার জন্য নির্দিষ্ট দপ্তর আছে। যেমন CRI, TRI, ASI, RGI, ইত্যাদি । দেখা গেছে ST হওয়ার জন্য যে মানদন্ড নির্ধারণ করা হয়েছে তা এই ক্ষত্রিয় সম্প্রদায় পূরণ করতে পারেনি। ফলে CRI, TRI স্তরেই তাদের দাবী সরকার খারিজ করে দিয়েছে। criteria না fill up করতে পারলে reject হবে এটাই স্বাভাবিক ।কিন্তু জোরপূর্বক রেল অবরোধ, সড়ক অবরোধ, ঘেরাও ইত্যাদি করে Scheduled Tribe হতে চাইছে, সরকারের কাছে চাপ সৃষ্টি করে CRI, TRI report তাদের অনুকূলে তৈরী করতে বাধ্য করছে । এটা কী ধরনের আন্দোলন? 


আজ যদি কোনো NON-TRIBE community Scheduled Tribe হওয়ার জন্য আন্দোলন করে বা সরকারকে চাপ দেয়, আদিবাসীরাও তা বাধা দেওয়ার জন্য গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন করবেই এটাই স্বাভাবিক। এটা লজ্জারও কিছু নেই, সঙ্কোচেরও কিছু নেই। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই যে এই ভাবে non-Tribe community যদি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে Scheduled Tribe status আদায় করে, তাহলে genuine ST তাদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে সম্পূর্ণ ভাবে বঞ্চিত হবে, এটা ঝর্ণা জলের মত পরিষ্কার। সংরক্ষিত আসনে দুর্বলদের সাথে প্রতিযোগিতার কারণে একচ্ছত্র ভাবে বুদ্ধিমান জাতি সিলেকশন হবে এটা অস্বীকার করার কিছু নেই।


সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিচারে, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষত্রিয়দের ST হওয়ার আন্দোলন বর্তমান সরকার থেকে বেশি ইন্ধন যোগান দেওয়া হচ্ছে বলে আমার ধারণা। এর আগের সরকারের আমলে এদের আন্দোলনের মাত্রা বিশেষ নজর পড়ার মত কিছুই ছিল না, বরং সেই সময় "ক্ষত্রিয়" হওয়ার আন্দোলন সারা জঙ্গলমহলে জোর কদমে চলছিল। 2012 সালে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর এই আন্দোলন এক রকম হঠাৎ করেই 180° মোড় নেয়। শুরু হয়েগেল ST হওয়ার অফিসিয়াল প্রসেস। 2017 সালে 8th January, পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে পাঠানো হল CRI report. কিন্তু ST হওয়ার মানদন্ড পূরণ করতে না পারায় 29/9/2017 তারিখে RGI (Registrar General of India) সেই রিপোর্ট খারিজ করে দেয়। তার আগেই 2015 সালে ঝাড়খণ্ড সরকারের TRI report RGI reject করে দিয়েছে । তখনই কুড়মিদের আন্দোলনে বিশাল স্ফুলিঙ্গ জ্বলে ওঠে। কুড়মিদের ST তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করে ফের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে 6/2/2021 তারিখে কেন্দ্রে চিঠি পাঠানো হয়। তাতেও কোনো কাজ না হওয়ায় 20 সেপ্টেম্বর 2022 থেকে লাগাতার পাঁচদিন পশ্চিমবঙ্গে দুই জায়গায় রেল অবরোধ করা হয়। জানা যায় কেন্দ্র সরকার থেকে CRI report এর সাথে justifications চাওয়া হয়েছে এবং রাজ্য সরকার এখনও সেটা দেয়নি। ফলে আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য রেল অবরোধ চলছে। 

প্রশ্ন হচ্ছে এখানকার রাজ্য সরকার কুড়মিদের সহযোগীতা না করলে এতদিন ধরে বার বার রেল অবরোধ কী ভাবে সম্ভব হচ্ছে ??? 

পাশাপাশি দেখুন ঝাড়খণ্ড বা উড়িষ্যাতে এই ধরণের অবরোধ করতে পারছে না কেন? 

আসল খেলা খেলছে এখানকার রাজ্য সরকার। কুড়মিদের ST করে দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে। যারফলে আমাদের আদিবাসী জনপ্রতিনিধিগণ, আদিবাসীদের হয়ে তো কোনো কথা বলছে না, উল্টে কোনো অথেন্টিক হিস্ট্রি না জেনেই রঘুনাথ মাহাত ও চানকু মাহাতকে চুয়াড় বিদ্রোহ ও সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়ক সমর্থন জানিয়ে তাদের মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন। আশ্চর্য লাগে, আদিবাসী এক মন্ত্রী, আদিবাসী সংগঠন যখন সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিল তখন ওনার দেখা করার সময় ছিল না , কিন্তু কুড়মি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কি সুন্দর আদর আপ্যায়ন করে মেমোরেন্ডাম গ্রহণ করছেন। তখন সময়ের অভাব হল না। 


ST status পাওয়ার জন্য কুড়মি ভাইরা তাদের পোশাক আশাক, ভাষা সংস্কৃতি, রীতি রেওয়াজ 

আমুল পরিবর্তন করতে লেগে পড়েছে। সে করুক, তাতে কারও অসুবিধা নেই, কিন্তু সব থেকে ভয়ংকর বিষয় আদিবাসীদের ইতিহাস চুরি /বিকৃতি। ইতিমধ্যেই চুয়াড় বিদ্রোহ ও সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাস যেভাবে হাইজ্যাক করা হচ্ছে, সত্যিই চিন্তার বিষয়। 


সোসাল মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী গতকাল ঝাড়খণ্ডের জামসেদপুর ডোবা কামারবেড়া তে একটা খালের সেতু "বিরষা মুন্ডা সেতু" নামে বোর্ড লাগনো ছিল। রাতের মধ্যে কে বা কারা সেই বোর্ড ভেঙে শহীদ রঘুনাথ মাহাত সেতু নামে বোর্ড ও মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। এই কিছুদিন পূর্বে উড়িষ্যা ময়ূরভঞ্জ জেলার এক আদিবাসী গ্রামের জাহের, কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ ভেঙে তছনছ করে দেয়। এই ভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে সিধু কানু বিরষা তিলকাদের মূর্তি অক্ষত থাকবে কী না সেই প্রশ্ন এখন থেকেই দেখা দিচ্ছে। গত দেড় বছর আগে পুরুলিয়া জেলার কোনো মন্ত্রীর গ্রামে, সিধু কানু মূর্তির রাতের অন্ধকারে কে বা কারা ভেঙে দিয়েছিল। দোষী ব্যাক্তিদের চিহ্নিত করা হয়েছিল কি না আমার জানা নেই তবে দুষ্কৃতীদের হিংস্র দৃষ্টিতে জঙ্গলমহলের ইতিহাস নিতান্তই একটা ঠুনকো মাটির উপর অবস্থান করছে এখন এটা বোঝা যাচ্ছে এবং এর জন্য দায়ী এখানকার ক্ষমতাসীন দল। আজ রাজনীতি সওদা কারীরা যদি মনে করে বিশেষ এক শ্রেনীর অন্যায় আবদারকে মেনে নিলে তারা আরও ক্ষমতায় থাকবে তাহলে তারা ভুল করবেন । পাশাপাশি কুড়মি ক্ষত্রিয়রা যেভাবে আদিবাসীদের বীর শহীদের অপমান এবং ধর্মীয় স্থানকে ভেঙে অশান্তির বাতাবরণ তৈরী করছে তার ফল কিন্তু মোটেই ভাল হবেনা। আদিবাসী শান্তিপ্রিয় মানুষ, গনতন্ত্র পদ্ধতিতে আন্দোলন করে। তারমানে এই নয় বৃটিশ পিরিয়ডের মত সব অত্যাচার মুখবুজে সহ্য করে যাবে। আদিবাসী মানুষ একতা হচ্ছে, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নজরে রেখেছে। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি অবশ্যই চলছে। 


জহার। 

বালকরাম সরেন ।


No comments:

Post a Comment

Post Top Ad