ইংরেজি ১লা জানুয়ারি সমস্ত জাতির মধ্যে এক আনন্দের নতুন বছর। কিন্তু সেই সমস্ত জাতির মধ্যে আদিবাসীদের এদিন দুঃখের দিন।১৯৪৮ সালের ১লা জানুয়ারী বর্তমান ঝাড়খন্ড রাজ্যের খরসোয়াতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে উড়িষ্যা মেলেটারি পুলিশ তাদের উপর গুলিবর্ষণ করে। এবং তাতে হাজার হাজার আদিবাসী শহীদ হন আজকের এই ইংরেজি নববর্ষ দিনে। যদিও সরকারিভাবে শহীদ হওয়া আদিবাসীদের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। স্বাধীন ভারতে এটি আবার আদিবাসীদের উপর জালিওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড বলে অভিহিত করা হয়।
শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে ভারতবর্ষ পরাধীন থেকে স্বাধীন লাভ করে ১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ সালে। ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দেশের মধ্যে রাজ্য গঠনের কাজ শুরু হয়। সেই সময়ই আদিবাসীরাও দাবি করে ঝাড়খন্ড রাজ্যে কে পৃথক আদিবাসী রাজ্য হিসেবে গঠন করার জন্য। সরাইকেল্লা ও খরসোয়া এই দুটি দেশীয় রাজ্য কে ওড়িশা রাজ্যের সঙ্গে গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হলে ওই দুটি রাজ্যের শাসকগোষ্ঠী রাজি হয়। কিন্তু তাতে আদিবাসীরা তার তীব্র বিরোধিতা করে। তাদের একটাই দাবি ছিল যে ওই দুটি দেশীয় রাজ্যেও যেন ঝাড়খন্ড রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হোক। কিন্তু ওই দুটি রাজ্য ঝাড়খন্ড রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হলনি।
অপরদিকে আদিবাসী অধ্যুষিত বিহার রাজ্যের সঙ্গে ওই দুটি দেশীয় রাজ্য কে যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই বিহার রাজ্যের সঙ্গে প্রস্তাবিত রাজ্য দুটিকে যুক্ত করার প্রতিবাদে বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের খরসোয়াতে আদিবাসী মহাসভা ডাকা হয়।এই আদিবাসী মহা সভাই প্রায় পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করে। ওই বিশাল আদিবাসী মহাসভায় উপস্থিত আদিবাসী গোষ্ঠীর ভাষা, উড়িষ্যা মিলিটারি পুলিশ বুঝতে না পারায়। তাদের উপরে নির্বিচারে খরসোয়া রাজমহল কে রক্ষার দাবিতে গুলি বর্ষণ করা হয়। ওই আদিবাসীদের উপর গুলিবর্ষণ করা ছাড়াও হাজার হাজার আদিবাসী কে ধরে এক কুয়ার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। এবং ওই কুয়ার মুখ বন্ধ করে তাদেরকে হত্যা করা হয়। এই ভাবেই উল্লিখিত আজকের এই দিনে উড়িষ্যা মিলিটারি পুলিশ হাজার হাজার আদিবাসী কে মেরে ফেলে। তাই আজকের এই দিন সমস্ত জাতির আনন্দের দিন হলেও তা আদিবাসীদের কাছে দুঃখের দিন। আজকের এই আনন্দের দিনে আদিবাসীরা প্রতিবছর কালা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

No comments:
Post a Comment