Dinamkhobar

Post Top Ad

Saturday, February 3, 2024

সাঁওতালি ভাষায় মুক্ত শিক্ষার দাবিতে আলোচনা ।


Fight for Mother Tongue এর উদ্যোগে Open University থেকে সাঁওতালী ভাষায় (B.A/M.A in Santali Language ) পড়াশুনার গুরুত্ব ও আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হল পূর্ব বর্ধমানের মানকর গীতাঞ্জলি ম্যারেজ হলে। এদি আলোচনাতে উপস্থিত ছিলেন পন্ডিত রঘুনাথ মুরমুর ভাব-শিষ্য ও শিক্ষক নবীন বেসরা, পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল গার্লস কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিতাই টুডু , পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতাল শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে মাননীয় শিক্ষক শত্রুঘ্ন মুর্মু (পুরুলিয়া জেলা সহ সম্পাদক), দিশম আদিবাসী গাঁওতার রাজ্য সভাপতি- লবাণ হাঁসদা (পশ্চিমবঙ্গ ), ও শৈলমন মান্ডি ( পশ্চিম বর্ধমান দিশম আদিবাসী গাঁওতার কনভেনার ) আদিবাসী সোসিও এডুকেশন কালচার এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মাননীয় রূপচাঁদ কিসকু (পশ্চিম বর্ধমান জেলার প্রেসিডেন্ট),ও মানকর কলেজের সান্তালি বিভাগের সম্মানীয় মহাশয় নলিন মান্ডি, পন্ডিত রঘুনাথ মুরমু আবাসিক হাই-স্কুল (সাহেবডাঙ্গা, আউসগ্রাম) শিক্ষক শ্যামল সরেন। পশ্চিম বর্ধমানের চাঁপাডাঙ্গা আদিবাসীপাড়া প্রাইমারি স্কুলের সাঁওতালি মাধ্যম শিক্ষক কালাচাঁদ টুডু ও অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক তারাচাঁদ সরেন । এছাড়াও পূর্ব বর্ধমান ও পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া , পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম , হুগলি সহ বিভিন্ন জেলার আরো অনেকে উপস্থিত ছিল বিশিষ্ট শিক্ষা-সমাজসেবী, বুদ্ধিজীবী ,অধ্যাপক, শিক্ষক , নবীন-প্রবীণ এবং মুক্তশিক্ষা আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীরা।
পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র দুটি জায়গায় রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ে সাঁওতালি ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে পড়াশোনা চলছে, আর কোথাও.... Open University থেকে সাঁওতালী ভাষাতে (B.A/M.A in Santali Language ) পঠনপাঠন হচ্ছে না।
উল্লেখ্য পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার মানকর কলেজে ৯ই ফেব্রুয়ারি 2023 সালে আবেদনচিঠি জমা দিয়ে আবেদন করা হয়। পরের দিনই আবেদন পত্রটি কলেজ থেকে নেতাজী সুভাষ ইউনিভার্সিটিতে আগ্রহী ৮৪ জন শিক্ষার্থীর সইসহ Document পাঠানো হয়। পরবর্তীকালে কলকাতায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র ওপেন ইউনিভার্সিটিতে আবেদন নিবেদন করা হয় এবং আলোচনাও করা হয়। ২৪/০৪/২৩ গনডেপুটেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতির চাপে প্রতিনিধি মূলক ডেপুটেশন দেওয়া হয়- নেতাজি ওপেন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য চন্দন বসু ও কর্তৃপক্ষর উপস্থিতিতে। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সাঁওতালি ভাষায় পঠন পাঠনের কলেজের ও ইউনিভার্সিটির নামের তালিকা, সহকারী অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাদের নাম ,ইমেল, যোগাযোগ নাম্বার সহ তথ্য চাওয়া হয়। সেই তথ্য ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে পরবর্তীকালে দেওয়া হয়। তাঁরা আশ্বাস দেন এ বছর থেকেই চালু হবে। কিন্তু কোন কাজ এগোইনি, সংগঠনের পক্ষ থেকে অনেকবার ই-মেইলের মাধ্যমে , কখনো ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলেও তার যথাযথ উত্তর কতৃপক্ষে দেয়নি। এই সংগঠনের নেতৃত্ব অন্যান্য আদিবাসী সংগঠন গুলিকে কপি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তূ সেই রকম কোনো সাড়া পাওয়া গেলনা। তার মধ্যে পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যে ভারত জাকাত সানতাড় পাঠুওয়া গাঁওতার (BJSPG)কমিটিদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় যাওয়া হয় । তাতেও যখন কাজ হলো না। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সংগঠন কর্মকর্তা দেরকে google মিটের মাধ্যমে সরাসরি আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান হয়। তাই গত ২৮শে জানুয়ারি বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তাদেরকে নিয়ে আলোচনা সভাতে সার্বিক সম্মতিক্রমে এদিন সিদ্ধান্ত হলো নেতাজি সুভাষ ওপেন ইউনিভার্সিটিতে সাঁওতালি বিষয়ে পড়াশোনার জন্য জোরালো শিক্ষা আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করা। সর্ব সম্মতিক্রমে Fight for Mother Tongue সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলার ডিপিও, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে আবার প্রতিনিধি মূলক আলাপ আলোচনা , তারপর গণ ডেপুটেশন এর মাধ্যমে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হয়। বিভিন্ন ইস্যু বা বিভিন্ন অধিকার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করে থাকে বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরে সাঁওতালি ভাষা ও সাঁওতালি মিডিয়ামে অলচিকিলিপির হরপে পঠন পাঠন শুরু হয়েছে, তা 2025 সালে সাঁওতালি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হবে, এটা পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। যেখানে সাঁওতালি মাধ্যমের শিক্ষক নেই, বই নেই, আলাদা ক্লাস রুম নেই, নেই ছাত্র-ছাত্রীদের হোস্টেল, এক কথায় শিক্ষার পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামোর অভাব। দীর্ঘদিন ধরে বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছাসেবী সাঁওতালি শিক্ষক কাজ করে গেছেন। কিছু সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাঁওতালী শিক্ষা ব্যবস্থার সহযোগী হিসেবে কাজ করে গেছেন। সেখানে রাজ্য সরকার বা কেন্দ্র সরকারের সহযোগিতা নেই। সাঁওতালি ভাষার মাধ্যমে বা বিষয়ে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সাঁওতাল তথা আদিবাসী মানুষের কাছে কতটা প্রয়োজনীয়তা তা সরকারের বিভিন্ন অফিসে, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে বারবার বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে আবেদন নিবেদন করে। এমনকি এই মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার দাবিতে ডি আই ডি এম অফিস, রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের রেল লাইন, ও রাস্তা অবরোধ বন্ধ বিক্ষোভ মিছিল ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। সাঁওতাল তথা আদিবাসী সমাজে বিভিন্ন চাকরিতে সংরক্ষণের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাসত্ত্বেও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য মুক্ত বিদ্যালয় থেকে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ও সাঁওতালি শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ টুকু নেওয়ার আরেকটি বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হতে চলেছে। এই আন্দোলনে অর্ধ শিক্ষিত থেকে শুরু করে ৮০ বছরের পর্যন্ত বয়স্ক মানুষদের ইচ্ছা- পশ্চিমবঙ্গে বা ভারতবর্ষের যে কোন স্থানে সাঁওতালি Distance Education সেন্টার খোলা হোক। সেখানে ফাইট ফর মাদার টাং এর সংগঠন সমীক্ষা করে দেখা গেছে মাতৃভাষা সাঁওতালি B.A. এবং M.A. ওপেন ইউনিভার্সিটি তে পড়ার জন্য কম করে ৬৫০ জন শিক্ষার্থী অনলাইন গুগল ফরমে ফিলাপ করেছিল। পরবর্তীকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা অফিসে কখনো গোপনে কখনো প্রকাশ্যে মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন-নিবেদন করে। কিন্তু না, এই অধিকার বা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়নি । এই নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন গুরুত্বসহকারে জোরালো দাবি করা হয়নি ।
উল্লেখ্য এটাই প্রথম কনফারেন্স যেখানে বিভিন্ন সংগঠন এক হয়ে একই মুক্ত মঞ্চে মুক্তবিশ্ববিদ্যালয়ে মাতৃভাষার মাধ্যমে পড়াশোনার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। মুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য শিক্ষার সুযোগ প্রদান করা সম্ভব। বিশেষ করে, দরিদ্র, অনগ্রসর, অঞ্চলভেদে বৈষম্যগ্রস্ত, কর্মজীবী, প্রতিবন্ধী, প্রবাসী ইত্যাদি শ্রেণীর মানুষদের জন্য মুক্ত শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি শিক্ষার প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি করে, শিক্ষার মান উন্নয়ন করে, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করে এবং সমাজের উন্নয়নে সহায়তা করে। তাই, মুক্ত শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
বর্তমান বিশ্বে দূরশিক্ষার গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে ভাষা মাধ্যমে দূরশিক্ষা ব্যবস্থা আরও উন্নত ও জনপ্রিয় হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad