Dinamkhobar

Post Top Ad

Saturday, December 22, 2018

আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ 22শে ডিসেঃ 2018


রবীন হেমব্রম,আসানসোল:-সমগ্র বিশ্বে উৎযাপিত হচ্ছে “আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ 22শে ডিসেঃ 2018

United Nation 2019 সালকে “আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ “(IY2019) বলে ঘোষণা করেছে।এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে এই বিষয়ে যথেষ্ট সচেতনতা বৃদ্ধি করার আবেদন রেখেছে।কিন্তু কেন??

মানুষের পরস্পরের মনের ভাব বুঝে নেওয়ার প্রধান মাধ্যম হলো ভাষা, যা মানুষ মাতৃজঠর থেকেই সেই অধিকার অর্জন করে আসে। ভাষা মানুষ কে দৈনন্দিন জীবনে এক মহত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ করে। শুধু মাত্র শিক্ষা, সংস্কৃতি‌ ও সামাজিকের একটি দিক নয়, প্রত্যেকটি মানুষের নিজস্ব পরিচয়, ইতিহাস ও পরম্পরার ঐতিহ্য বহন করে ভাষা। সুতরাং একটি ভাষাই হলো একজন মানুষের নিজস্বতা ফুটিয়ে তোলার প্রধান হাতিয়ার। প্রতিটি জীব অন্য জীবের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের নিজস্ব একটি মাধ্যম রয়েছে। যেমন-পশু-পাখিরা শিস্ দিয়ে বা বিভিন্ন রকমের আওয়াজের মাধ্যমে ভাব বিনিময় করে থাকে। মানুষও প্রথম দিকে আকার ইঙ্গিতের দ্বারাই নিজেদের মধ্যে কথা বলতো। কালক্রমে নিজেদের অভিজ্ঞতাও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ভাষার জন্ম দিয়েছে। এক একটা ভাষা সৃষ্টির ইতিহাস সুদূরপ্রসারী। ভাষা হলো জীব ও প্রাণী কুলের প্রধান মেরুদণ্ড। আর ভাষার জন্মের পরপরই মানুষের মধ্যে জাতি, গোষ্ঠী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আচার-ব্যবহার প্রভৃতি বিষয় গুলো আসে।

সুতরাং একটি জাতিসত্তার পরিচয় নির্ধারণ করে তার মাতৃভাষা। কিন্তু কোন কারণে যদি সেই ভাষার প্রাচুর্য হারিয়ে যায়, তবে তা হবে সেই জাতিগোষ্ঠীর বড় ধরনের সাংস্কৃতিক ও ভাষিক বিপর্যয়।আর সেই সংকটময় পরিস্থিতিতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন হয় সংরক্ষণের ।

বহু ভাষা-ভাষী মানুষের বাসভূমি হলো এই পৃথিবী। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বিশ্বে ২০৭ টি দেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় ৭০০কোটি মানুষ বাস করে, তার মধ্যে আনুমানিক ৯০টি দেশে প্রায় ৩৭০কোটি মানুষ হলো আদিবাসী ভাষাসমপন্ন জাতিগোষ্ঠী। যারা সর্বক্ষণ তাদের ভাষা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে ।

সব থেকে দুশ্চিন্তার বিষয়টি হলো বর্তমানে এই বিশ্বায়নের যুগে সমগ্র মানব সভ্যতা থেকে প্রতি দুসপ্তাহ অন্তর একটা করে ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অধিকাংশই হলো আদিবাসী ভাষা। ঠিক যেমন, এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে নিজেকে সঠিক ভাবে অভিযোজিত করতে না পারার কারণে বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি, গাছপালা লুপ্ত প্রায়।

UN এর কথা অনুযায়ী, যদি কোন ভাষায় এক হাজার জনের থেকেও কম সংখ্যক মানুষ কথা বলে, তখন সেই ভাষাকে “Danger Zone” এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, Marine Smith Jones এর মারা যাওয়ার সাথে সাথে ২০০৮ সালে South- Alaska র “Yak” ও বিলীন হয়ে গেছে, যিনি এই ভাষায় কথা বলার শেষ ব্যক্তি ছিলেন।

বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে, সমগ্র পৃথিবীতে মানুষ তার প্রজন্মের সঙ্গে নিজের মাতৃভাষা ব্যবহার করা প্রায় বন্ধ করে দিচ্ছে, বরং বহুজনের সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহারকে আপন করার তৎপরতা সবার মধ্যে বেশীমাত্রায় লক্ষণীয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে-এইরূপ আচরণ বিধিও একটি ভাষা-সংস্কৃতির হত্যার সমান। কারণ একটি ভাষা হারিয়ে যাওয়া মানে একটি জাতির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাওয়া।

১৯০০ থেকে ২০০০সাল, এই ১০০বছরে প্রায় ৬০০টি ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং ২০১৬সালের 19th December, সংযুক্ত রাষ্ট্র জানিয়েছে – বিশ্বে আনুমানিক ৬৭০০ ভাষার মধ্যে ৪০% (২৬৮০) ভাষা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশই আদিবাসী ভাষাগুলি। এই কারণে রাষ্ট্রপুঞ্জ-এর “আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী কমিটি” (United Nation Permanant Forum On Indigenious Issues) – একটি রেজুলেশনের ভিত্তিতে (Resulation 71/178) ২০১৯সালকে “আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ ” বলে আখ্যায়িত করেছে সমগ্র দায়িত্ব দিয়েছে UNESCO কে।

UNESCO সেই মতে—

১) মানুষের মনে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হয়েছে। শুধু মাত্র যাঁরা এই ভাষাগুলিতে কথা বলেন তাঁরা নয়, সকল মানুষকেই সহযোগিতার হাত বাড়াতে এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে যে ঐক্যর মিলন রয়েছে তা সুদৃঢ় করার আহ্বান জানিয়েছে।

২) আদিবাসী ভাষা সমূহের সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

৩) আদিবাসীদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনগত, সামাজিক, ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গুলিকে বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপর অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়েছে, যাতে সদস্য রাষ্ট্র গুলি উৎসাহিত হয়ে স্বদেশীয় সকল অধিকারকে উৎসাহিত করে।

আর এই কারণেই এই চলতি বছর ২০১৮ সালে পূরো উদ্যম নিয়ে সমগ্র বিশ্বে উৎযাপিত হচ্ছে “আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ ২০১৯”। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সংস্থা উৎসাহিত হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে নিযুক্ত হয়েছে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad